Bengali

কৃষ্ণকুমারী নাটকেও মধুসূদন উপকাহিনির সংযোজন করেছেন তা আলোচনা করো

নাটক বা উপন্যাসে মূল কাহিনির সঙ্গে উপকাহিনির সংযোজন করা হয়। কখনও কাহিনিতে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করার অভিপ্রায়ে আবার কখনও মূল বক্তব্যকে বলিষ্ঠ করে তোলার প্রচেষ্টায় আবার কাহিনির ঘটনার অভাব পূরণ করা ইত্যাদি। বিভিন্ন কারণে ঔপন্যাসিক বা নাট্যকার উপকাহিনির জন্ম দেন।

কৃষ্ণকুমারী নাটকের উপকাহিনি

কৃষ্ণকুমারী নাটকেও উপকাহিনি আছে। মূল কাহিনির ঘটনার অভাব পূরণ করার কথা মাথায় রেখেই নাট্যকার এখানে উপকাহিনির আশ্রয় নেন। মূল কাহিনি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সেখানে দেখা যায় উদয়পুরের রাজার একমাত্র কন্যা কৃষ্ণকুমারী অত্যন্ত রূপসী। তাঁকে মরুদেশের রাজা মানসিংহ ও জয়পুরের রাজা জগৎসিংহ বিয়ে করতে চায়। কৃষ্ণকুমারীকে কেন্দ্র করে মহাসংঘর্ষের সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখন কৃষ্ণা বুঝতে পারে তাঁর মৃত্যুতে রাজ্য রক্ষা পাবে। তাই সে স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নেয়। এই কাহিনিকে পূর্ণতা দিতে গিয়ে নাট্যকার মধুসূদন ইতিহাসের ক্ষীণসূত্র অবলম্বন করেন।

জয়পুরের রাজা জগৎসিংহের এক রক্ষিতা কর্পূরমঞ্জরীকে নাটকে বিলাসবতী নামে কোমল প্রেমিকা নারীতে পরিণত করেছেন। বিলাসবতীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পরিকল্পনাকে কার্যকরী করতে বিলাসবতীর সহচরীর ভূমিকা নেন মদনিকা। মদনিকা অত্যন্ত চঞ্চল, প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন সে বিলাসবতীর ঈপ্সিত কর্তব্যপূর্ণ করার চেষ্টা করেছে। ধনদাস স্বার্থপর, অর্থলোলুপ ব্যক্তি। নাটকে প্রধান চরিত্রগুলি নিষ্ক্রিয় কিন্তু ধনদাস ও মদনিকা এই পার্শ্ব চরিত্ররা নাটকে প্রাধান্য পেয়েছে।

Read more মাইকেল মধুসূদনের কৃষ্ণকুমারী নাটকটি ট্র্যাজেডি নাটক হিসেবে সার্থক কিনা যুক্তিযুক্ত আলোচনা কর ?

নাটকের প্রথম অংকে দুটি গর্ভাঙ্কে ঘটনাস্থল জয়পুর। প্রথমটির দৃশ্যপট রাজগৃহ এবং দ্বিতীয়টির দৃশ্যপট বিলাসবতীর গৃহ। এখানে যে চরিত্রগুলি রয়েছে তাদের মধ্যে রাজা জগৎসিংহের একমাত্র নিবিড় সম্পর্ক মূল ঘটনার সঙ্গে। অন্য চরিত্রগুলি অপ্রধান। ১ম গর্ভাঙ্কে দেখা গেছে ধনদাস চরিত্রটি কৃষ্ণকুমারীকে মাধ্যম করে ধনোপার্জন এবং আপন উদ্দেশ্য সিদ্ধি করে। দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কে দেখি প্রধান ভূমিকা নেন মদনিকা। ধনদাসের জগৎসিংহের সঙ্গে কৃষ্ণার বিয়ে দেওয়ার চক্রান্তকে ব্যর্থ করার জন্য মদনিকা মতলব কষেছে।

দ্বিতীয় অংকে রয়েছে তিনটি গর্ভাঙ্ক। এই তিনটি গর্ভাঙ্কের ঘটনাস্থল উদয়পুর। এখানে নাটকের মূল পাত্রপাত্রীদের আমরা পাই বটে, কিন্তু ধনদাস এবং মদনিকাই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কে ধনদাস কর্তৃক মন্ত্রীকে বোঝাবার চেষ্টা এবং তৃতীয় গর্ভাঙ্কে কৃষ্ণকুমারীকে দর্শন দিয়ে মানসিংহের দূতী হিসাবে নিজের পরিচয় দেওয়া। তৃতীয় অংকে গর্ভাঙ্ক সংখ্যা তিনটি।

Related কৃষ্ণকুমারী চরিত্র অথবা কৃষ্ণকুমারী চরিত্রের ট্র্যাজেডি আলোচনা কর।

প্রথম গর্ভাঙ্কে মধুসূদন ধনদাস ও মদনিকার বুদ্ধির খেলাকে দেখিয়েছেন, দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কে মহারাষ্ট্রের অধিপতি মানসিংহের কৃষ্ণার বিবাহ ইচ্ছাকে সমর্থন করেছেন। কৃষ্ণার পদ্মিনীর উপদেশ উপস্থিত হওয়া বড় আকস্মিক বলে মনে হয়। তৃতীয় গর্ভাঙ্কে ধনদাসের কাণ্ডকারখানা রয়েছে। চতুর্থ অংকের তিনটি গর্ভাঙ্ক। এই তিনটি গর্ভাঙ্কের কাহিনি জয়পুরে সংঘটিত। অংকটি মূল নাটক থেকে বিচ্ছিন্ন। ধনদাস ও মদনিকাকে নিয়ে এই অংকটি এগিয়ে গেছে।

প্রথম গর্ভাঙ্কে মরুদেশের প্রকৃত উত্তরাধিকারী নিয়ে জগৎ সিংহের আলোচনা এবং ধনকূল সিংহের প্রসঙ্গ যেন নাটকের পক্ষে প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। ধনদাসের কুকর্মের ফল যে কি লাভ করল, মদনিকা ও বিলাসবতীর সঙ্গে তাঁর । সম্পর্ক কি দাড়াল এসব তথ্য নাটকে রয়েছে। তাই নাটকটির নাম | ‘কৃষ্ণকুমারী’ দেওয়াও উচিত হয়নি। তাকে ঐতিহাসিক নাটকও বলা যায় না। পঞ্চম অংকে নাট্যকার মূল নাট্যকাহিনির প্রতি বিশ্বস্ততা দেখিয়েছেন। নাটকের প্রতিটি অংকের পর্যালোচনা করে দেখা যায় পুরো নাটকেই ভীমসিংহ ও কৃষ্ণকুমারী চরিত্র নিষ্ক্রিয়।

ধনদাস ও মদনিকা চরিত্রগুলি বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেছে। তাঁদেরকে উপকাহিনির নায়ক-নায়িকা মনে করা সংযত নয়, কারণ মূল কাহিনিই তাঁদের জন্য সংঘটিত হয়। তবে মধুসূদনের এ জাতীয় প্লট নির্মাণ না করে বোধ হয় উপায় ছিলনা। কৃষ্ণকুমারীর জন্য দুই রাজার সংঘাত দেখাতে গিয়ে ধনদাস ও মদনিকাকে প্রাধান্য দিতে হয়েছে ফলে একথা বলা যায় যে নাটকের মূল চরিত্রগুলিকে বা মূল ঘটনাকে ত্বরান্বিত করতে উপকাহিনি বা পার্শ্ব চরিত্রগুলির গুরুত্ব কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবেনা।

Back to top button

Adblock Detected

If you enjoy our content please support our site by disabling your adblocker. We depend on ad revenue to keep creating quality content for you to enjoy for free.