Bengali

কমলাকান্তের দপ্তর একটি গীত

 

কমলাকান্তের দপ্তর একটি গীত,kamalakanter daptar in bengali pdf,,
কমলাকান্ত প্রসন্ন গোয়ালিনী,
রাজলক্ষ্মী,
কমলাকান্তের দপ্তর গান ,
কমলাকান্তের দপ্তর একটি গীত,
মণি নও মাণিক নও,
শ্রীকৃষ্ণ মথুরা,
kamalakanter daptar bankim chandra chattopadhyay,
কমলাকান্তের চরিত্র,
কমলাকান্তের দপ্তর সারমর্ম,
কমলাকান্তের দপ্তর প্রশ্ন উত্তর,,
কমলাকান্তের দপ্তর প্রবন্ধ,
কমলাকান্তের দপ্তর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস,
এসো এসো বঁধু এসো,

কমলাকান্ত প্রসন্ন গোয়ালিনীকে গান শোনাতে চাইলে প্রসন্ন প্রথমে রাজি হয়নি। গানের প্রথম কলি গাওয়াতে প্রসন্ন আপত্তি করল। তারপর কমলাকান্ত যখন সুর করে কীর্তন ধরল তখন প্রসন্ন দুধের কেঁড়ে রেখে বসে পড়ল। গানটি হল—“এসো এসো বধূ এসো।”

কমলাকান্তের মতে এই গানে মিলের ত্রুটি আছে বটে কিন্তু কাব্যময়তার দিক থেকে এটি দ্বিতীয় রহিত। কমলাকান্ত একটি দৈববংশী নিয়ে মেঘের উপর যেখান থেকে পৃথিবী দেখা যায় না সেই দৃশ্যশূন্য শব্দশূন্য স্থানে বসে এই গান গাইতে চায়।

এসো এসো বঁধু এসো।

কমলাকান্তের দপ্তর -এসো এসো বঁধু এসো।

কমলাকান্ত বুঝতে পারে না যে ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তিতে কি সুখ আছে। বিলাসপ্রিয়ের মুখে এসো এসো বঁধু বুঝতে পারে না। তবে এইটুকু বুঝতে পারে যে মানুষের সৃষ্টি মানুষেরই জন্য। হৃদয়ে হৃদয়ে মিলনই মনুষ্য জীবনের সুখ। একজন মানুষের হৃদয় আর একটা হৃদয়কে ডাকছে–“এসো এসো বঁধু এসো।” মহতী প্রবৃত্তির উদ্দেশ্য ‘এসো এসো এসো’। মানুষ যশের আকাঙ্ক্ষা করে পরের অনুরাগ লাভের জন্য। মানুষ পরোপকার করে পরের ক্লেশ নিজের বলে অনুভব করে বলেই। সব কিছুতেই এই এসো এসো বঁধু এসো। জড় জগতেও এই একই রব এসো এসো বঁধু এসো।

Read more ‘বড়বাজার’ রচনায় ‘বিদ্যার বাজার’ ও সাহেবদের ‘এক্সপেরিমেন্টাল সায়েন্স’-এর দোকানে গিয়ে কমলাকান্ত চক্রবর্তী তাঁর অভিজ্ঞতার যে সরস বর্ণনা দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় বিস্তৃত কর।

‘আধ আঁচরে বসো’ বাঞ্ছিতকে হৃদয়াবরণের অর্ধেকে বসতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কারণ পরের হৃদয় যেন কাছে আসে, স্পর্শ করে। এই আঁচল লৌকিক কোন আঁচল নয়। এই আঁচল হচ্ছে তানের আঁচল। যাতে মনের নগ্নতা নিবারিত হয়।

‘নয়ন ভরিয়া তোমায় দেখি’—কেউ কখনো নয়ন ভরে আত্মধন দেখতে পায়নি। তাছাড়া যাকে আমরা রূপ বলি, সৌন্দর্য বলি, সেই রূপ সেই সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই নয়নভরে দেখা হয় না। এটাই দুঃখ অথবা এটাই সুখ কারণ নয়নভরে দেখতে পেলে মানুষ পরিতৃপ্ত হত। মানুষের ইচ্ছা নয়ন ভরে দেখি। দূরে বসলে দেখা হয় না তাই ডাকছে এসো এসো বঁধু এসো।

‘অনেক দিবসে মনের মানসে তোমা ধনে মিলাইল বিধি’—কমলাকান্ত মনে করে দুঃখের পরিমাণ জানার জন্যই বিধাতা দিবস সৃষ্টি করেছেন। দিবস গণনার মূলে আছে দুঃখ দূর হবার আশা। কমলাকান্ত কোন সুখের আশায় দিন গুণবে।

Read also কৃষ্ণকুমারী নাটকে মোট কয়টি গান আছে ? গানগুলি উল্লেখ করে নাট্যকাহিনির অগ্রগতিতে গানগুলির গুরুত্ব উল্লেখ কর।

অবশ্য কমলাকান্তের একটি দুঃখ আছে, আশা আছে। ১২০৩ সালে যেদিন বঙ্গদেশে হিন্দুনাম লোপ পেয়েছে যেদিন সপ্তদশ অশ্বারোহী এসে বঙ্গদেশ জয় করেছে সেদিন থেকে কমলাকান্ত দিন গুণছে। কিন্তু এখনো কমলাকান্তের বিধি মিলল না। মনুষ্যত্ব, একজাতীয়ত্ব, একতা এবং বঙ্গদেশের গৌরব, গৌরব সে ফিরে পায় নি। বিদ্যা নেই, শ্রীহর্ষ, ভট্টনারায়ণ, হলায়ুধ, লক্ষ্মণসেন নেই। সকলেরই প্রিয় সম্মেলন হয়, ইঙ্গিত মেলে। কিন্তু কমলাকান্তের মেলেনি।

‘মণি নও মাণিক নও, যে হার করে গলে পরি,—বিধাতা এই জগৎকে জড়ময় করেছেন। রূপও জড় পদার্থ। সকলই যদি অশরীরী হত তাহলে হৃদয়ে হৃদয় মিলত। হায় মণিমাণিক্য হলে হার করে গলায় পরা যেত। আর বঙ্গভূমি যদি মণিমাণিক্য হতো তাহলে কমলাকান্ত কণ্ঠে পরিধান করত। তখন মুসলমান কমলাকান্তকে পদাঘাত না করে বঙ্গভূমিকে স্পর্শ করতে পারত না।

Related কমলাকান্তের দপ্তর বড়বাজার

‘আমায় নারী না করিত বিধি/ তোমা হেন গুণ নিধি/ লইয়া ফিরিতাম দেশ দেশ।’ ব্রজের গোপীদের দুঃখ ছিল তারা নারী। যদি নারী না হত তাহলে প্রাণ প্রিয়কে নিয়ে দেশে দেশে দেখিয়ে বেড়াত। কিন্তু কমলাকান্তের এবং বাঙালির সেই অধিকার নেই। বাঙালির দুঃখ বিধাতা বাঙালিকে নারী করেননি কেন। তাহলে তো এই মুখ দেখাতে হত না।

‘তোমায় যখন পড়ে মনে/ আমি চাই বৃন্দাবন পানে/আউলাইলে কেশ নাহি বাঁধি।’ শ্রীকৃষ্ণ মথুরা চলে গিয়েছেন, গোপীদের জীবনে সুখ নেই কিন্তু সুখের স্মৃতি আছে। সেই স্মৃতি হল বৃন্দাবন। এই বৃন্দাবনের দিকে তাকালে সুখের স্মৃতি মনে পড়ে। কিন্তু যার সুখ গেছে, সুখের স্মৃতি গেছে তার আর দুঃখের সীমা নেই। তার দুঃখের শেষ নেই। সুখের কিছু স্মৃতি আছে কিন্তু নিদর্শন নেই। একমাত্র শ্মশানভূমি আছে নবদ্বীপ। এই নবদ্বীপ থেকে বঙ্গজননী, বঙ্গের রাজলক্ষ্মী বিদায় নিয়েছে। সেই নবদ্বীপ আর নেই। কিন্তু রয়েছে গঙ্গা। এই গঙ্গাকে কমলাকান্ত বলছে বিশ্বাসঘাতিনী। সে এখনও কলতানে মুগ্ধ করে কিন্তু কমলাকান্তের মানসচক্ষে বঙ্গরাজলক্ষ্মীর অন্তর্ধানের চিত্র মুদ্রিত হয়ে আছে। বঙ্গের রাজলক্ষ্মী গঙ্গার অতলেই রয়েছে। নাহলে গেল কোথায়।

Back to top button

Adblock Detected

If you enjoy our content please support our site by disabling your adblocker. We depend on ad revenue to keep creating quality content for you to enjoy for free.